Skip to content

গল্প/ দ্বিচারিণী — তারিন

    Sangkranti

    Sangkranti

    চিন্তার মুক্তিই সংক্রান্তি

    চার দেয়ালের মাঝে দাঁড়িয়ে খোলা আকাশের দিকে তাকালে মনে হয় মানুষের চেয়ে ফানুশ হয়ে জন্ম নেয়া ভালো ছিল। কিন্তু ফানুশই বা কতটুকু স্বাধীন, তা তো বাতাসের বিপরীতে যেতে পারেনা। বাতাস তাকে উড়িয়ে নিয়ে যেদিকে যাবে সেদিকেই তাঁর গন্তব্য। পৃথিবীর কোনোকিছুই কি সীমাবদ্ধতার ঊর্ধ্বে নয়? নাকি চার দেয়ালের মাঝে দাঁড়িয়ে সবকিছুকেই সীমাবদ্ধ মনে হয়! এ কি নিজেকে দেয়া নিজের সান্তনা? পুরাণ ঢাকার ইসলামপুরে এক প্রকাণ্ড জমিদার বাড়ির উঠোনে দাঁড়িয়ে এসবই ভাবছিল সূচনা। চার মাস আগে সে এই বাড়ির সদস্য হয়ে এসেছে, বাড়ির সেজো পুত্র সোবহান খানের বিবাহিতা স্ত্রী হিসেবে। প্রথম দিন এ বাড়িটা সূচনার কাছে যেমন রহস্য মনে হয়েছিল। আজ প্রায় শতদিন পরেও একই রকম রহস্যময় তার কাছে, যে রহস্য তার কখনো জানতে ইচ্ছে হয়নি। নির্বিকার ও নির্লিপ্ত এক কুড়ি বছরের তরুণী এই রহস্যের মাঝে নিজেকে মানিয়ে নিচ্ছে। যদিও মানিয়ে নেবার বিশেষ চেষ্টা তার নেই। তবে সে জানে তার কাছে আর কোনো পথ নেই। মানিয়ে নেবার চেষ্টা ছাড়াই সে টিকে থাকবে।
     
    বাড়ির দোতলার সর্বদক্ষিণের ঘর থেকে এক নারীকণ্ঠ তাকে ডাকছে। সূচনা ঠাহর করতে পারল না কে ডাকছে। এই বাড়ির সদস্যসংখ্যা অনেক। যেহেতু নাম ধরে ডেকেছে সেহেতু বয়োজ্যেষ্ঠ কেউ হবে। এসব ভাবতে ভাবতে সিঁড়ি বেয়ে দোতলায় পৌঁছে বুঝতে পারল যিনি ডাকছেন তিনি ওয়ালিজা খালা। তার শাশুড়ির বড় বোন। ‘আরমানরে দেইখা আসো তো। ওর কিছু লাগব কিনা’। ওয়ালিজা খালার আদেশ মোতাবেক সে ছাদের ঘরের দিকে পা বাড়াল। ছাদের ঘরে আরমান থাকে। তাকে সার্বক্ষণিক দেখভাল করে যে দুজন নার্স আজ তারা ছুটি নিয়েছে। তাই আজ সারাদিন আরমানের দায়িত্ব সূচনার। আরমান এ বাড়ির কনিষ্ঠ সন্তান। তার প্রায় সমস্ত শরীর প্যারালাইজ্ড। ঘাড় শক্ত করে বসতে পারে বলে সময় কাটানোর জন্য উপযোগী উপায় বের করতে পেরেছে। আনুমানিক এগারো বছর আগে দশম শ্রেণীতে পড়াকালীন তাঁর একবার জ্বর এসেছিল। সেই জ্বর সেরে উঠতে মাস খানেক সময় লাগলো। কিন্তু আবার মাস না পেরোতেই জ্বরে পড়ল সে। চিকিৎসা শুরু করেছিল বেশ দেরী হবার পর। তারপর থেকে শয্যাশায়ী।
    ‘ডেকেছেন?’ সূচনার প্রশ্নের জবাব আরমান দেয় না। পলকহীন চোখে তাকিয়ে থাকে, ঠোঁটের কোণে আপসপূর্ণ হাসি।
    কিছুক্ষণ পর জবাবে বলে ‘ডাকিনি। তবে বড় খালা তোমাকে পাঠিয়েছে বুঝতে পেরেছি। ভালোই হলো এসেছো। সকাল থেকে কোনো মানবকূলের দেখা পাইনি’। সূচনা চেয়ার টেনে নিয়ে বিছানার পাশে রেখে চেয়ার ধরে দাঁড়িয়ে থাকে। আরমান বসতে বললে জবাবে সে মৃদুস্বরে বলে, ‘আপনার আদেশের অপেক্ষা তো আমি করছি না’। তারপরে সে চেয়ার অতিক্রম করে বিছানায় আরমানের মাথার পাশে গিয়ে বসে। আরমান খানিকটা অবাক আর সস্মিত ভঙ্গিতে তাকিয়ে থাকে সূচনার মুখের দিকে। সূচনাও তাকায় আরমানের মুখের দিকে। কি ভেবে দূজন একসঙ্গে সজোরে হাসে। আরমান হাসি থামিয়ে মুগ্ধ হয়ে প্রথমবারের মতো সূচনার হাসি দেখে। সূচনা তখনও হেসে যাচ্ছে। দু’হাত দিয়ে ঠোঁট চেপে ধরছে হাসির মাঝে। আরমান এমন প্রাণবন্ত দৃশ্য দেখেনি বহুদিন কিংবা কোনোদিন।

     
    বিকেল গড়িয়ে রাত নেমে এলো। রাতের সাথে এক অদ্ভুত আতঙ্ক, অস্বস্তি আর ক্ষোভ সূচনাকে জাপটে ধরে। সে কিছু প্রকাশ করেনা। বাড়ির বাচ্চারা সন্ধ্যার পর পড়তে বসে। গা দুলিয়ে দুলিয়ে ছড়া, স্বরবর্ণ, এবিসিডি। এই দৃশ্য আর শব্দের সাথে গত চারমাসে অভ্যস্ত হয়েছে সূচনা। বাচ্চাদের পড়ার শব্দ তার কানে আসে আর প্রচ্ছন্ন এক তীব্র অস্বস্তি বাড়তে থাকে। সেই সাথে নিচ তলার করিডরে হলুদ আবছা আলো, বাড়ির ভৃত্যদের রান্না বিষয়ক আলাপ, সজোরে চালিয়ে রাখা টিভির শব্দ এসবকিছু তার আতঙ্ক বাড়িয়ে তোলে, তাকে জানিয়ে দেয় আরও একটি দীর্ঘ রাতের প্রারম্ভ। আজও সোবহান নেশাগ্রস্ত হয়ে ফিরেছে। ঘরের দরজা সজোরে খুলে বিছানার দিকে এগোতে গিয়ে প্রকাণ্ড চেয়ারের পায়ায় ধাক্কা খায় প্রবলভাবে। পায়ের আঙ্গুল ফেটে রক্ত গড়িয়ে পড়ে। তারপর সেই চেয়ারটা এক হাতে টেনে ছিটকে ফেলে জানালার পাশে। ঘরের এক কোণে দেয়াল ঘেঁষে দাঁড়িয়ে এসব কিছু নিরুদ্বেগে তাকিয়ে দেখছে সূচনা। সে জানে তারপরে সোবহান উবু হয়ে পুরোটা বিছানা জুড়ে ঘুমিয়ে পড়বে অথবা সূচনার হাট টেনে ধরবে এমনভাবে যেন এই হাত একটা জরবস্তু যার ক্ষয় নেয়, জরা নেই।

     
    এ বাড়িতে সূচনার তেমন কোনো গৃহকর্মে হাত দিতে হয় না। বাড়ির ভৃত্যরাই তাদের রুচীমতো ঘর সাজিয়ে রাখে, রান্না করে। তাই সে বেশীরভাগ সময় একান্তে বসে কাটিয়ে দেয়। তখন সে নানারকম কথা ভাবতে থাকে। যে ভাবনার মধ্যে কোনো স্পৃহা নেই, আশা নেই। বিয়ের কিছুদিন আগে তার মা বলেছিল মধ্যবিত্তদের মানসম্মানই সব। আর কিছুই নেই। সূচনা মেনে নিয়েছে বিনাপ্রশ্নে। মানসম্মানকে বলবৎ রাখতে নিজের ইচ্ছে, খুশি স্বপ্ন বিসর্জন দিতে হয় এই মহৎ নির্দেশনা সে জন্মের পর থেকেই জেনে এসেছে। তাই তো বিশ্ববিদ্যালয়ের গণ্ডিতে পদার্পণের পর তাও ছেড়ে দিয়ে বিয়ের প্রস্তুতি নিতে হয়েছে তাকে। বিয়ের সম্বন্ধ এলে তার পরিবারের সবাই এতো আনন্দিত হয়েছিল, তাতে কিছুক্ষণের জন্য সূচনার মনে হয়েছিল এ বুঝি তার প্রাপ্তি। যে প্রাপ্তির আনন্দ সূচনার সকল প্রাপ্তিকে ছাড়িয়েছে, যে প্রাপ্তির আনন্দ থেকে শুধু সূচনাই বঞ্চিত। ‘সূচনা। সূচনা সূচনা।‘ আরমানের আচমকা ডাক শুনে সূচনা চমকে গেল।
    কখন এসেছো?
    অনেকক্ষণ হবে।
    ডাকোনি কেন?
    ‘আপনার ঘুম ভাঙাতে ইচ্ছে হয়নি’, জানালার বাইরে তাকিয়ে উত্তর দেয় সূচনা।
    ‘তোমার সঙ্গ আমার ভালো লাগে। ঘুমের কাছে এই ভালো লাগা হারাতে চাইনা।‘ বলতে বলতে বসার চেষ্টা করছে আরমান।
    ‘গত ছয় মাসে আপনার অনেক উন্নতি হয়েছে’, সূচনা বলল।
    এখন আর একজন নার্স আছে আরমানের দেখভাল করার জন্য। অবশ্য সে শুধু সূচনাকে সাহায্য করে। আরমানের যাবতীয় দেখভাল করার দায়িত্ব সূচনা নেয়ার পর থেকে আরমানের অভাবনীয় উন্নতি বাড়ির সকলের চোখে পড়েছে। বিষয়টিকে অবশ্য সোবহানের মা সকলের মতো সহজভাবে গ্রহণ করেনি। আরমান তার সতিনের পুত্র। আরমানের জন্মের সময় তার মা মারা গিয়েছিল বলেই ভদ্রমহিলার ভাগ্য ফিরেছে। না হলে আরমানের বাবা হয়তো এতোদিনে তাকে বাড়ি ছাড়া করতো।
    ‘কি ব্যাপার বৌমা? ভালো মন্দ খাইতেছো, গায়ে বাতাস লাগিয়ে ঘুরতাছো। নাতি নাতনির মুখ কি মরার আগে দেখুম না?’
    সূচনার ঘরে প্রবেশ করতে করতে কথাটা বলে তার শাশুড়ি। অবশ্য এই কথাটা এর আগে অর্ধশতাধিকবার আর অনেকের কাছে তাকে শুনতে হয়েছে।
    ‘ভাবছিলাম পোলাডারে বিয়া দিলে ছেলে বৌ আইসা নেশাপাতি ছাড়াইবো। এখন দেখতাছি উল্টা। আরও বাইড়া গেছে ছাইপাশ…..’
    বলতে বলতে সশব্দে কাঁদতে শুরু করে ভদ্রমহিলা। সূচনা তাকে সান্তনা দেবার উদ্দেশ্য কি বলবে ভেবে পেল না।

     
    বছর পেরোতে সুসংবাদ এলো। সূচনা সন্তানসম্ভবা। বাড়িতে উৎসবমুখর পরিবেশ। খবর পাওয়ার দুদিন পর বাড়ি ফেরেছে সোবহান। ব্যবসায়িক কাজে সপ্তাহের জন্য বিদেশ গিয়েছিল সে। সূচনার জন্য স্বর্ণের গহনা, দামী সুগন্ধি, হরেক রকম শাড়ি, খাবার নিয়ে এসেছে সে। বিয়ের পর প্রথমবার সূচনার মনে হলো সোবহান তার স্বামী। বাড়ির উঠোনন ভর্তি লোকজন, সবাই হৈ হুল্লোড় করছে। সবার মাঝে হাস্যজ্জল ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে আছে সূচনা। সে মা হবে। কি একটা উৎফুল্ল উৎকণ্ঠা। দোতলার বারান্দায় হুইলচেয়ারে বসে এই উৎসব দেখছে আরমান। সূচনা একবার ঘাড় ঘুরিয়ে তার দিকে তাকালো। কিছুক্ষণ দুজন দুজনের দিকে তাকিয়ে চোখে চোখে কিছু বলল। তারপর আবার একসাথে সজোরে হেসে উঠলো। সূচনা মুখে হাত দিয়ে হাসছে। এই দৃশ্য আরমান প্রাণ ভরে দেখে, পুলকিত হয়। সেই সাথে এক তাৎক্ষণিক বাসনা তাকে আকড়ে ধরে। সূচনার মনে হয় এই মুহূর্তে সমস্ত পৃথিবী সংকীর্ণ এই চড়ম সত্যের সামনে যে সে মা হবে। এই উঠোন আর দোতলার বারান্দার মধ্যকার যে দূরত্ব তার বিশালতা এই সত্যের মতোই তীব্র।

     
    বছর আগের শয্যাশায়ী আরমান এখন হুইলচেয়ারে বাড়িময় ঘুরে বেড়ায়, সবার সাথে একই টেবিলে খাবার খায়। এখন সূচনার সঙ্গে দেখা করতে তাকে অপেক্ষা করতে হয়না। ইচ্ছে করলে সে সূচনার ঘরে যেতে পারে। প্রতিদিনের মতো আজ বিকেলে আরমান সূচনার ঘরে গিয়ে দেখল তার দরজা বন্ধ। ফিরে যেতে পিছন থেকে ডাক পড়ল, ‘আরমান।
    আরমান পিছন ফিরে তার ভাই সোবহানের দিকে তাকিয়ে দেখে। তার মধ্যে নিদারুণ পরিবর্তন। এই পরিবর্তন ইতিবাচক হলেও আরমানের কাছে তা ভীষণ অপ্রীতিকর। কিছু কিছুক্ষণের জন্য আরমানের মনে হল এই সমৃদ্ধির প্রাপ্য সে একা। তাৎক্ষণিক ব্যাকুলতা সামলাতে না পেরে কোনো জবাব না দিয়ে আরমান তার ঘরের দিকে এগোতে লাগল। এই ব্যাকুলতা সোবহানের চোখ এড়ায়না। সে বুঝতে পারে। কতদূর বুঝতে পেরেছে তা নিয়ে তার মনে যে সংশয়, তা সে দূর করতে চায়না। সোবহান অসহায় বোধ করে, তার মনে হয় জীবনের অপূরণীয় অপচয় তাকে ভোগান্তি দিচ্ছে। এই ভোগান্তি স্থায়ী হওয়ার আতঙ্ক তাকে গ্রাস করল মুহূর্তে। সে জানে সূচনা তাকে ভালোবাসে না, তাকে কোনোভাবেই চায়না। সে জন্য সে নিজে দায়ী সে অকপটে স্বীকার করে নিজের কাছে। তবে এই পরিপাটি চমৎকার জীবন সে আবার হারিয়ে অন্ধকারে ডুবতে চায়না। নিষ্ফল মদের নেশার কাছে সে জীবনকে আরও একবার বিকিয়ে দিতে চায়না। সে চায় এক নিরাপদ জীবন। যে জীবনে নিরাপত্তা বলয় হয়ে আকড়ে ধরতে সূচনা আর তাদের সন্তান। আর সূচনা? সে কি চায়? না, তা ভাবতে গেলে চলবেনা। সে নিভৃতে ভাবতে সেসব কথা।

     
    সূচনা এখন নিজের যত্ম নেয়। একটা একটা করে দিন গুনতে থাকে পরমানন্দ। আর কিছু ভাবতে চায়না সে। কিন্তু ভাবতে না চাইলেই কি চড়ম সত্যকে উপেক্ষা করা যায়? যে সত্য এই অকল্পনীয় আনন্দের পরিণতি দিয়েছে। তবে এই সত্য উন্মোচনের ভয় সূচনার হচ্ছে না। সে শুধু এক ফুটফুটে সন্তানের প্রত্যাশায়। ইদানীং সোবহান বাড়িতেই থাকে দিনের বেশি অংশ। বাকিটা সময় সূচনাকে তার শাশুড়ি সময় দেয়। এজন্য আরমানের সাথে দেখা করা হয়ে উঠছে না। তবে মুখোমুখি ঘর হওয়াতে সে যখন বারান্দায় যায় তখন আরমানের দেখা মেলে। এইটুকু দর্শনে এক অদ্ভুত স্বস্তি পায় তারা দুজনে।
    এর মাঝে পূর্বপরিকল্পিনামতো ইউরোপে থিতু হওয়ার সকল বন্দোবস্ত করে ফেলেছে সোবহান। আচমকা এসে একদিন সে বাড়ির সবার মাঝে ঘোষণা দেয় সে তার স্ত্রী সূচনাকে নিয়ে বিদেশে পাড়ি জমাবে। সেখানেই তাদের সন্তান হবে।
    যাবার প্রস্তুতির সাথে দিন যত এগিয়ে আসে সূচনা অনুভব করতে থাকে এ বাড়িতে তার প্রথম দিনগুলোকে। এক অসহায় নিরুপায় নারী। যার কাছে জীবনের মানে ছিল অনর্থক আর না পাওয়ায় পরিপূর্ণ। যেখানে কোনো প্রত্যাশা, আনন্দ, প্রেম কিচ্ছু ছিলনা। তখন এক পুরুষ পক্ষাঘাতগ্রস্ত শ্রান্তরুপে আশ্রয়ের বিনিময়ে প্রেম নিয়ে এলো। রিক্ত জীবনে পূর্ণতা নিয়ে এলো। তারপর যেই রাতে কালবৈশাখীর ঝড়রুপে তাদের মিলনতিথী এক প্রাপ্তি নিয়ে এলো। নতুন এক প্রাণের সঞ্চার হলো। যে অনাগত প্রাণ নিয়ে এতো আয়োজন।

    বিদায়ের দিন সূচনা ও আরমান আরো একবার একবার তাকিয়ে ছিল একে অপরের দিকে। কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে হেসেছিল অকপটে। আরমান শেষবার প্রাণ ভরে দেখেছিল সেই হাসি।

    Author

    Leave a Reply

    Your email address will not be published. Required fields are marked *

    Share this post on social!